মো.শাফী চৌধুরী
আড়াই মাসের রাহমুনা আক্তার আলফা। মুখ দিয়ে এখনো কথা বলা শিখেনি। কিছুক্ষণ পর পর সে চিৎকার করে উঠছে৷ ছোট ছোট চোখ দিয়ে চারিদিকে কি যেন খুঁজছে। হয়তো মুখ দিয়ে বলতে পারছে না চোখ দিয়ে তার প্রিয় বাবাকে সে খুঁজছে। এই শিশুটি আশায় বুক বেঁধে আছেন- এই বুঝি বাবা ফিরে এসে তাকে মা বলে ডাকবে।
মা অপেক্ষায় আছে কখন দেখা পাবে তার সন্তানের । স্ত্রী অপেক্ষায় আছেন স্বামীর, আর বোন অপেক্ষায় আছেন ভাইয়ের। কিন্তু তাদের কারোর অপেক্ষার দিন পুরোয় না, কখনো পুরাবে না।
পরিবারের অভিযোগ শনিবার বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম ভাবে খুন হয় আখালিয়া নেহারীপাড়া এলাকার রায়হান উদ্দিন।কিন্তু পরিবারের কেউ ভাবতে পারেনি রায়হান পুলিশ হেফাজতে নৃশংসভাবে খুন হবে।
এদিকে স্বামীর অপেক্ষায় বসে আছেন প্রিয়তমা স্ত্রী তান্নি। স্বামীর চলে যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর থেকে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন তান্নি।আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কারো যেনো সাধ্য নেই তান্নিকে একটু সান্ত্বনা দেওয়া। কি দিয়েই বা তারা দিবে সান্ত্বনা। আড়াই মাসের অবুঝ শিশু নিয়েই যে তান্নির গন্তব্যহীন পথচলা শুরু করতে হবে এটা কারো অজানা নেই।
সে (রায়হান) তো চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আর তো কখনো ফিরে আসবে না, সেই না ফেরার দেশ থেকে কেউ ফিরেও আসেও না সেটাও জানা তান্নীর।
কিন্তু আড়াই মাসের সন্তানকে সান্তনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন তার মা। বাবা যে আর কখনো ফিরবে না তার । সন্তানকে আদর বা ঘুরতে আর নিয়ে যেতে পারবে তাদের বাবা । শুধু নির্বাক চোখে কি জানি ভাবছেন তান্নি (স্ত্রী)।
মা-বাবা,স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আখালিয়া এলাকায় নিজ বাসায় থাকতেন রায়হান। কাজ করতেন শহরের স্বনামধন্য এই চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে সহযোগী হিসেবে।এলাকায় ভদ্র,শান্তশিষ্ট হিসেবে বেশ খ্যাতি রয়েছে রায়হানের।কেউ কখনো ভাবেননি এভাবে অকালে চলে যাবে রায়হান।
রায়হানের নির্মম ভাবে খুন হওয়ার খবর শুনে আত্মীয় স্বজন সবাই বাড়িতে ছুটে আসছেন। রায়হানের মা ও স্ত্রী বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।
অবুঝ সন্তান বাবা ফিরে না আশায় বার বার বাবার জন্য চিৎকার দিয়ে কান্না করছে। রায়হানের সুখের সংসারে এখন শুধুই কান্না আর উৎকন্ঠা ।
এদিকে ভাই হারানোর শোকে কাতর দুই বোন। তাদের কান্না দেখে আত্মীয় স্বজনরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না।
গতকাল যখন রায়হানের বাসার সামনে দিয়ে বাড়ী ফিরছিলাম তখন রাস্তার মধ্যখানে বসে রায়হানের মাকে দেখলাম ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে প্রতিবাদ করছেন।বাদ যায় নি রায়হানের আড়াই বছরের শিশু সন্তানও।ফুফুর কোলে চড়ে সেও এসেছিলো তপ্ত রোদের মধ্যে বাবা হত্যার বিচার চাইতে।
আসলে এই দৃশ্যটি দেখে আমার চোখের কোনায় অশ্রু টলমল করছিলো।
তখন খুব মনে পড়ছিল গায়ক হায়দারের এই গানটি……
কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে শিক্ত?
কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দিপ্ত?
কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য্য?
নির্মমতা কতদুর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ?
আমি চিৎকার করে কাদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।।
.....................
অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন কি দিয়ে দেব শান্তনা ?
না ফেরার দেশে ভাল থাকুক রায়হান, তার সন্তান ও স্বজনের ধৈর্য ধারনের শক্তিদান করুক আল্লাহ পাক। প্রকৃত খুনিরা শাস্তি পাক এই নৃশংস হত্যাকান্ডের। কোন নির্দোষ ব্যক্তি যেন হয়রানি শিকার না হয় এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এই প্রত্যাশা।
লেখকঃগনমাধ্যমকর্মী
একটি মন্তব্য করুন
সম্পর্কিত মন্তব্য
২১ জানুয়ারী ২০২১, ০৫:০৩ অপরাহ্ন